কোলেস্টেরল একটি ভয়াবহ রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই ঘাতক রোগ নিয়ে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। আসলে কোলেস্টেরল হল রক্তে থাকা মোম জাতীয় পদার্থ। এই কোলেস্টেরল শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগে। এক্ষেত্রে কোষের মেমব্রেন তৈরি হয় এই পদার্থের মাধ্যমে।
কোলেস্টেরল শরীরে থাকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে। এর পরিমাণ সেই গণ্ডি পেরিয়ে গেলেই কিন্তু মুশকিল। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াটাই হল মঙ্গল। এবার মুশকিল হল, শরীরে কোলেস্টেরল (Cholesterol) বাড়লে তেমন কোনও লক্ষণ প্রথমে থাকে না। ফলে বেশিরভাগ মানুষ জানেনই না যে তাঁর শরীরে কোলেস্টেরল বেশি রয়েছে। এক্ষেত্রে একবারে স্ট্রোক (Stroke), হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) হওয়ার পর ধরা পড়ে যে রোগ শরীরে রয়েছে। তবে কিছু ভাগ্যবান মানুষের এই বিরাট সমস্যা হওয়ার আগেই রোগ ধরা পড়ে। তাঁরা যদি একটু মেনে চলেন, তবে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
কলকাতার বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: রুদ্রজিৎ পাল বলেন, কোলেস্টেরল রোগটিকে নিয়েন্ত্রণে (Cholesterol Control) রাখতেই হবে। এক্ষেত্রে রক্তে কোলেস্টেরল সামান্য বেশি থাকলে ডায়েট ও জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন অবশ্যই করতে হয়। সেক্ষেত্রে কোলেস্টেরল কমে। আর কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি ডায়েট ও লাইফস্টাইলে বদল আনতে হয়।
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়-
১. রেড মিট নয়
রেড মিট (Red Meat) কিন্তু খুবই খারাপ এক খাবার। এক্ষেত্রে গরু, ভেড়া ও ছাগলের মাংস হল একধরনের রেড মিট। এবার রেড মিট খেলে অনেক ক্ষেত্রেই বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল শরীরে ঢোকে। এই মাংসে থাকা কোলেস্টেরল কিন্তু খুবই খারাপ। তাই সতর্ক থাকা দরকার। এছাড়া এই মাংসে রয়েছে ভালো পরিমাণে ফ্যাট। সেই ফ্যাটও শরীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে বলে জানালেন ডা: পাল।
২. ঘি, ডালডা ব্যবহার
এখনও অনেকে ডালডা বা বনস্পতি খান। বহু রান্নায় ঘি, ডালডা ব্যবহার হয়। ঘি, ডালডা খাবারকে মুখোরোচক করে তুলতে পারে। কিন্তু সেই খাবার থেকে সমস্যা হওয়াও সম্ভব। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বলছে যে, ডালডায় রয়েছে অনেকটা পরিমাণে খারাপ কোলেস্টেরল। এই কোলেস্টেরল কিন্তু সমস্যা তৈরি করে দিতে পারে। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই ডালডা খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। এমনকী ঘি, মাখন এড়িয়ে যান। বরং সোয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল খাওয়া যেতে পারে।
৩. ডিপ ফ্রাই
এক্ষেত্রে অনেকেই ডিপ ফ্রায়েড (Deep Fried Food) খাবার খান। এই ডিপ ফ্রায়েড খাবারের মধ্যে রয়েছে চপ থেকে শুরু করে চিপস, বিভিন্ন ফাস্ট ফুড ইত্যাদি। এবার এই খাবারগুলিকে ভালো পরিমাণে তেলে প্রচণ্ড গরমে ভাজা হয়। এই কারণে এই খাবারগুলি কিন্তু শরীরে বড়সড় সমস্যা তৈরি করে ফেলে। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই দিকটি নিয়ে হয়ে যেতে হবে সাবধান। এক্ষেত্রে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়াও সম্ভব।
৪. শাক, সবজি খান
শাক, সবজিতে ভালো পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ। সব মিলিয়ে শরীর ভালো রাখতে পারে শাক, সবজি। এমনকী দেখা গিয়েছে, শাক-সবজি নিয়মিত খেলে বাড়তে পারে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল (HDL)। তাই এই ধরনের খাবার প্রতিটি মানুষের পাতে থাকা উচিত বলেই জানাচ্ছেন ডা: পাল।
৫. ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারলে অনেক সমস্যার হয় সমাধান। এক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম (Exercise) খারাপ কোলেস্টেরলও শরীরে কমাতে পারে। তাই দিনে অন্তত পক্ষে ৪৫ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে করতে হবে ব্যায়াম। তবেই ভালো থাকা হবে সম্ভব। এমনকী ওষুধের উপর নির্ভরতাও কমবে।
তবে এখানে ডা: পাল সতর্ক করে বলেছেন, ওষুধের (Medicine) প্রয়োজন হলে খেতে হবে। অন্যথায় বিপদের আশঙ্কা থাকে বেশি।