ঢাকারবিবার, ২৮শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অস্ট্রেলিয়া থেকে গ্রামে ফিরে কুকুর খামার, বছরে আয় ১৮ লাখ

উপজেলা প্রতিনিধি ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
জুন ১২, ২০২২ ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ / ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
                                                       
                           
Link Copied!
ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট                            

ছোট বেলা থেকেই কুকুরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে ফোসহাত রাব্বী স্বজলের। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুকুর লালন-পালনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চতর ডিগ্রি শেষে দেশে ফিরেই গড়ে তুলেন কুকুরের খামার। বর্তমানে খামারে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ৪০টি কুকুর। যেখান থেকে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫টি কুকুর উৎপাদিত হচ্ছে। এসব কুকুর অফলাইন কিংবা অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ খামার থেকে বছরে তার গড় আয় হচ্ছে ১৮ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার চন্ডিবের কামাল সরকার বাড়ির সন্তান ফোসহাত রাব্বী স্বজল। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে ঢাকার গুলশানে। পড়াশোনা করেছেন ক্যান্টনমেন্টের শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকে ফিরে গ্রামের বাড়ি গড়ে তুলেন কুকুরের খামার। এ খামারে দেশি সরাইল, জার্মান শেফার্ড, ডোবারম্যান, কাউকেশান শেপার্ড, সাইবেরিয়ান হাস্কি, ফ্রেন্স মাস্তিফ, গ্রেড ডান, বাল মাস্তিফ, সেইন্ট বেনার্ড, ক্যান কর্স, ব্রিটিশ বুলডগ ইত্যাদি প্রজাতির কুকুর রয়েছে।

ফোসহাত রাব্বী স্বজল জানান, ছোট বয়স থেকে কুকুরপ্রীতি থাকলেও একদিন পেশায় রূপ নেবে তা কখনো ভাবতেন না। তিনি জন্মের পর থেকেই তাদের পরিবারে কুকুরের লালন-পালন দেখেছেন। তাদের ঢাকার বাসায় দেশী-বিদেশি প্রজাতির তিন-চারটি কুকুর সব সময়ই থাকতো। ফলে শিশুকাল থেকেই কুকুরের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে।

রাব্বী বলেন, আমার নানা আব্দুল জলিল যখন বিদেশে পাট বিক্রি করতে যেতেন, তখন বিদেশি কুকুর কিনে আনতেন। তখনকার সময়ে সেসব কুকুর বাসার পাহারাদার হিসেবে কাজ করতো। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা শেষ করে যখন দেশে ফিরে আসি তখন আমি নিজের ঢাকার বাসায় বিদেশি জাতের বিভিন্ন ধরনের কুকুর সংগ্রহ করি। সেসব কুকুর লালন-পালন করে বাচ্চা উৎপাদন করতে থাকি। তখন থেকেই ভাবতাম আমি যদি বাণিজ্যিকভাবে কুকুরের খামার গড়ে তুলি তাহলে দেশের মানুষ সহজেই আমার কাছ থেকে বিদেশি কুকুর নিতে পারবে। সেই থেকে ভৈরবে কুকুরের খামার গড়ে তুলি।

তিনি আরও বলেন, ৬৮টি কুকুর দিয়ে গ্রামে খামার করি। তবে এখন ৪০টি রয়েছে। আমার খামারে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫টি কুকুর ছানা আসছে। সেসব কুকুর অফলাইন কিংবা অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতিটি কুকুর প্রজাতি ভেদে ২০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করি। যা থেকে প্রতি বছর ১৫-১৮ লাখ টাকা আয় হচ্ছে আমার।

কুকুর খামারের পরিচর্যাকারী নারী জয়তি বলেন, ‘তিন বছর হলো এ খামারে কাজ নিয়েছি। প্রথম দিকে ঢাকার একটি পার্লারে কাজ করতাম। ছোট থেকেই কুকুর পুষতে খুব পছন্দ করতাম। সে থেকে কুকুরে প্রতি আমার একটা বিশেষ ভালোবাসা ছিল। পার্লারে কাজ করার ফাঁকে মাঝে মধ্য রাব্বীর বাসায় পোষা কুকুর দেখতে যেতাম। তিনি ভৈরবে তার খামারে কাজ করার কথা বললে আমি রাজি হই।

 

জয়তি স্বামী ভিন সেন পাথাং বলেন, প্রথমে রাব্বীর ঢাকার বাসায় কাজ করতাম। তারপর তিনি ভৈরবে খামার দিলের দুবছর যাবত এখানে কাজ করছি। পোষা কুকুর পালন করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এখানে বিভিন্ন দেশের নানান জাতের কুকুর রয়েছে। এসব কুকুর কখনো আমাদের আক্রমণ করেনি। আমরাও তাদের কোনো ধরনের আঘাত করিনি। তাদের যদি একটু আদর ভালোবাসা দেওয়া যায় তাহলে তারা সহজেই মিশে যায়। তাদের দিনে দুই বেলা ব্রয়লার মুরগি, ভাত, খিচুড়ি দেওয়া হয়। গোসল প্রতিদিন করানো হলেও শ্যাম্পু করানো হয় সপ্তাহে একদিন। চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে দিতে হয় প্রতিদিনই।

ভৈরব পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর মোমেন মিয়া  ‘আমার ওয়ার্ডে এমন একটি ভিন্ন ধরনের খামার গড়ে তোলায় বেশ আনন্দিত। ব্যক্তিগত এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে খামারের জন্য যে কোনো সহযোগিতা করবো। এ ছাড়া এমন ব্যতিক্রমী খামার অন্য কেউ করতে উদ্যোগী হলে, তাদের সব রকমের সহায়তা দেওয়া হবে।

 

স্থানীয় মুর্শিদ-মুজিব উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন  বলেন, আমরা ইতিপূর্বে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির খামারের কথা শুনেছি, দেখেছি। কিন্তু এ প্রথম কুকুরের খামার দেখলাম। কুকুরের খামার কেউ করবেন, এমনটি কখনো ভাবিনি। উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের পর গ্রামে এসে কুকুরের খামার করায় আমরা অবাক হয়েছি। বর্তমানে খামারটি আমাদের এলাকার বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ছুটির দিনে এলাকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সেখানে যায়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শিরিনা খাতুন  বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী খামার। রাব্বী ছোট থেকেই কুকুরপ্রীতি ছিলেন। সেই সময় থেকে তিনি ঢাকার গুলশানের বাসায় ছোট পরিসরে কুকুর পালন শুরু করেন। পরবর্তীতে ভৈরবে একটি ব্যতিক্রমী কুকুরের খামার গড়ে তুলেছেন। এখন খামারটি বেশ লাভজনক। আমরা তাকে সার্বিক সহায়তা করে যাচ্ছি। এমন আরও কেউ যদি ভিন্ন ধরনের কিছু করার উদ্যোগী হন, তাদেরও সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হবে।