১৯৭৫ সালে চালু হয় ইউএস জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) প্রোগ্রাম। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তাদের রপ্তানিকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈচিত্র্য প্রচারের পরিকল্পনা করেছিল। জিএসপির অধীনে মানসম্মত পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ নিশ্চিত করা হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১১৯টি উন্নয়নশীল দেশ এই কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ এবং ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এই জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে না। যদিও ১৯৮৫ এবং ১৯৭৫ সাল থেকে এই দুই দেশ জিএসপি কর্মসূচির সদস্য। তবে বাংলাদেশ ২০১৩ সালে এবং ভারত ২০১৯ সালে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু নিজেদের সুবিধার জন্যই উভয় দেশের জিএসপি মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।
ভারত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদী অংশীদার দেশ। তাদের মধ্যে বহুমাত্রিক ও গভীর অংশীদারিত্ব রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র গত ফেব্রুয়ারির ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ডকুমেন্টে পুনর্ব্যক্ত করেছে। এদিকে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। এটি দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে রয়েছে। এর আশেপাশে ক্রমবর্ধমান প্রভাবের চর্চা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেশটি স্বীকৃতি পেয়েছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতে এখনও লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। এটি মোকাবিলার জন্য বাণিজ্য খুবই কার্যকর উপায়। এ কারণে উভয় দেশই জিএসপি কর্মসূচির অংশ ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের জিএসপি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৯ সালের ৫ জুন ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত বাজারে প্রবেশ প্রদানে ব্যর্থতার জন্য কার্যকরী জিএসপি যোগ্যতা থেকে ভারতকে সরিয়ে দেয়। ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের সঙ্গে জিএসপি প্রত্যাহারের আরও বেশি সম্পর্ক ছিল। তখন আশঙ্কা করা হয়েছিল যে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর চাপ দিয়ে শুল্ক বাড়ানোর অজুহাত খুঁজছেন।
অপরদিকে কর্মীদের অধিকার সম্পর্কিত বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ ২০১৩ সালের জুনে জিএসপিতে প্রবেশাধিকার হারায়। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে দুটি বড় পোশাক শিল্পে দুর্ঘটনার পরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ওই দুই দুর্ঘটনায় যথাক্রমে ১১২ জন এবং ১ হাজার ১৩২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিল। এরপরেই কর্মীদের নিরাপত্তা এবং কাজের অবস্থার উন্নতির জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয় যা স্বাস্থ্য, অগ্নি এবং ভবন সুরক্ষার ধারাবাহিক চুক্তিতে সর্বাধিক দৃশ্যমান হয়েছে এবং এটি জিএসপি পুনঃস্থাপনের যোগ্যতা অর্জন করেছে। এমনকি সংগঠনের স্বাধীনতার মতো শ্রমিক অধিকারের উন্নতির কাজও চলছে।