ঢাকামঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘উত্তর-পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
জুলাই ১৮, ২০২২ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ / ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট
                                                       
                           
Link Copied!
ই-প্রিন্ট ই-প্রিন্ট                            

ভারত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সম্প্রীতির প্রশংসা করে। জিডিপিসহ অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফল। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

শনিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শাস্ত্রী ভবনের কনফারেন্সরুমে দেশটিতে সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ তাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান দুই দেশে উদযাপন করেছে। দুই দেশ মিলে একসঙ্গে মৈত্রী দিবস উদযাপন করেছে বিশ্বের ১৮টি দেশে। এটা অনেক বড় ব্যাপার। চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া এটি সম্ভব নয়। এটি সত্যিই অসাধারণ। গত দশ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে।

তিনি বলেন, সবশেষ কয়েক বছর বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। অর্থনৈতিক অগ্রগতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থান, গণতন্ত্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে। জিডিপি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেজ, আইটি, সার্ভিস সেকশন বাংলাদেশর উন্নতি ঈর্ষণীয়।

শ্রীলঙ্কা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কায় নজর রাখছি। প্রতিবেশী দেশটির এ অবস্থা আমাদের কষ্ট দেয়। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক। গণতান্ত্রিক উপায়ে তারা স্থিতিশীল হোক। শ্রীলঙ্কার জনগণই শেষ পর্যন্ত ঠিক করবে তারা কী চায়।

আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ভারত মানবিক সহায়তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। গম ও টিকা পাঠিয়েছে। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুস্পষ্ট প্রত্যাশা আছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবে তা স্পষ্ট হয়েছে। আফগান জনগণ যাতে অপেক্ষাকৃত ভালো ভবিষ্যৎ পায়- এটি সবার প্রত্যাশা।

ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত শান্তির পক্ষে। এ সংকটে অন্য সবার মতো ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউরোপীয় অনেক দেশের মতো ভারতও জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন তো নির্বাচনই। নরেন্দ্র মোদী যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন মনমোহন সিং করমর্দন করে হাসতে হাসতে বিদায় নেন। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা পরিবর্তন জরুরি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকা দরকার। নির্বাচন বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়।

তিনি বলেন, ভারত সম্পর্কে মানুষ যা ভাবতো, গত ১০ বছরে এর অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ যুব সম্প্রদায়। তারা যে কোনো ঝুঁকি নিতে পারে। তারা বিশ্বাস করে উদ্যোক্তা হওয়ায়, নিত্যনতুন আবিষ্কার, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

‘অর্ধেক ভারতীয়ের বয়স এখন ২৫ বছরের নিচে। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক সব সময় বিশেষ, স্বতন্ত্র। গত ৫০ বছর ধরে দুই দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী, পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি মডেল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক।’

এসময় তিনি ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের বাংলাদেশ সফর স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, উভয় দেশই এখন একটি বৃহত্তর অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি বা সিইপিএ স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা করছে। এজন্য চূড়ান্ত করা হচ্ছে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ। প্রতিবেশীদের আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুবিধা নেওয়া উচিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, বছরে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি ভারত ভ্রমণ করে। আমরা পরস্পর যোগাযোগ আরও বেশি চাই। আমরা চাই আরও বেশি বাংলাদেশি ভারতে আসুক। আমরা ভিসা প্রক্রিয়াও আগের চেয়ে সহজ করেছি।

সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতু দুই দেশের যোগাযোগ আরও বাড়াবে, সহজ করবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, বর্তমানে দুদেশের মধ্যে যে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করছে, পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পটি শেষ হলে তা আরও বেড়ে যাবে। কমে আসবে যাত্রার সময়।

দুই দেশের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ আরও বাড়ানো গেলে যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা আরও লাভবান হবেন বলে মনে করেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (বাংলাদেশ-মিয়ানমার ডিভিশন) পলোমি ত্রিপাঠী বলেন, দুদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ আরও বাড়াতে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে রেল রুটগুলো রয়েছে, সেগুলো দিয়ে আরও ট্রেন চালানো যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ব্যাপকভাবে বদলেছে ও এগিয়েছে। ২০ বছর আগে এমন ছিল না। বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি (যোগাযোগ), বাণিজ্য, সাধারণ মানুষে মানুষে যোগাযোগ অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ সব দেশের সঙ্গে ভারত সরকার ‘কানেক্টিভিটি’ বাড়ানোয় জোর দিতে চায়।