ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর পানি ঢাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক এই নদীর পানির ন্যায্য পাওনা নিশ্চিতে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের এজেন্ডায় তিস্তার বাইরেও থাকছে দুই দেশের মধ্যে যৌথ পানি-বণ্টনের বিষয়টি।
মূলত প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন এই সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে যৌথ পানি-বণ্টন এবং পানি ব্যবস্থাপনার বৃহত্তর ইস্যুতে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ। সোমবার (২৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি মূলত রাজনৈতিক শর্তের বেড়াজালে আটকে রয়েছে। আর তাই আগামী ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের সময় দুই দেশের মধ্যে যৌথ পানি-বণ্টন এবং পানি ব্যবস্থাপনার বৃহত্তর ইস্যুতে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে যা সীমান্তের উভয় পাশের মানুষের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই আসন্ন এই সফরে (ত্রিপুরা থেকে প্রবাহিত) মুহুরি এবং ফেনী (ত্রিপুরায়)-কুশিয়ারা (বাংলাদেশে) মতো অন্যান্য বড় নদীগুলোর বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করছে দেশ দু’টি। এছাড়া ২০২৬ সালে গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়নের বিষয়েও কাজ করছে প্রতিবেশী এই দুই দেশ।
দুই দেশের মধ্যে একটি পানি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনার সাথে উভয় সরকারই অভিন্ন নদীর পানি সম্পদ সম্পর্কিত তথ্য আদান-প্রদান, বন্যার তথ্য আদান-প্রদান এবং বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো এই অঞ্চলের সাধারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য যৌথ ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিচ্ছে।
ভারতের প্রভাবশালী এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের সাথে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি এখনও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জি সরকারের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বিতর্কিত ইস্যু হিসেবেই রয়ে গেছে।
এদিকে মোদি-হাসিনার মধ্যকার আসন্ন বৈঠকের আগে উভয় দেশের যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গত মঙ্গলবার ভারতে আলোচনা শুরু করেছে। ২০১০ সালের পর এবারই প্রথমবারের মতো এই বৈঠক হলো। জেআরসির সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার ভারত ও বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
তিস্তা ইস্যু ছাড়াও ছয়টি অভিন্ন নদী – মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা এবং দুধকুমার – নদীর পানি-বণ্টন নিয়ে আসন্ন সফরে একটি কাঠামো চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের। এছাড়া গঙ্গার পানি-বণ্টন চুক্তির পুনরায় নয়ায়ন সংক্রান্ত বিষয়টিও এসময় গুরুত্ব পাবে।
ঢাকার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বৈঠকে দুই পক্ষই গঙ্গার পানি ব্যবহার নিয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা এবং কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদী তিস্তা কংশে হিমবাহে উৎপন্ন হয়েছে এবং বাংলাদেশে প্রবেশের আগে নদীটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭ সালে তিস্তার মূল এলাকাগুলো ভারতকে বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে।
২০১১ সালে ভারত তিস্তা নদীর ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে সম্মত হয় এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রাখতে সম্মত হয় দেশটি। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী শুরু থেকেই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন।