বিশাল একটি দেশ ইরান। এ দেশের ইস্ফাহানকে বলা হয় 'নেসফে জাহান' মানে অর্ধ বিশ্ব। আবার ইস্ফাহান শহরকে বলা হয় ‘মোজে হামিশে জেন্দেয়ে ইরান’। এর অর্থ হলো অমর যাদুঘর।
চরহরবাগ মাদ্রাসা এবং এই মাদ্রাসা স্থাপনাটির টাইলসের কারুকাজের দিক থেকেও এই মাদ্রাসা স্থাপনার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এতো বিচিত্র টাইলসের কাজ রয়েছে এই ভবনটিতে যে বলা হয়ে থাকে এটি তো মাদ্রাসা নয়ে যেন ইস্ফাহানের টাইলস শিল্প যাদুঘর। মাদ্রাসার একটি বড়সড়ো আঙিনা রয়েছে। মাদ্রাসার চারপাশ জুড়ে রয়েছে বিশাল বিশাল সবুজ গাছগাছালি। আঙিনার মাঝখানে রয়েছে বহমান ফোয়ারা। উঠোনের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য হুজরা মানে কক্ষ।
চহরবাগ মাদ্রাসার উত্তরদিকে বেশ উঁচু একটি বাজার রয়েছে খুবই সুন্দর। সাফাভি শাসনামলে উঁচু এই বাজারটিকে শাহী বাজার নামেও অভিহিত করা হতো। আজকাল অবশ্য এই বাজার শিল্পকর্মের বাজার হিসেবেই বিখ্যাত।
চহরবাগ মাদ্রাসার পূর্বদিকে একটি সরাইখানা রয়েছে। ‘মাদার শাহ’ অর্থাৎ শাহের মা নামে প্রতিষ্ঠিত এই সরাইখানাটিকে বর্তমানে আব্বাসি সরাইখানা নামেই চেনে সবাই। বিগত তিন শতাব্দি মানে তিন শ বছর ধরে ভ্রমণকারীদের কাছে সবচেয়ে প্রশান্তিদায়ক এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশের জন্য এই মাদার শাহ সরাইখানাই ছিল বিখ্যাত এবং এখনও এর গ্রহণযোগ্যতা আগের মতোই আছে। বিশ্বব্যাপী আধুনিক হোটেলের স্থাপত্যশৈলী বলতে যা বোঝায় সেই বিচারে এই আব্বাসি সরাইখানা এখনও প্রথম স্থানীয় হিসেবে স্বীকৃত। এরকমই অনন্য এবং নজিরবিহীন একটি আবাসিক স্থাপনা এই মাদার শাহ সরাইখানা। এখন তো আর সরাইখানা বলা হয় না, এখন আবাসিক হোটেল বলেই জানে সবাই।
শাহ আব্বাসি হোটেল ছেড়ে চহরবাগ সড়ক ধরে হাঁটতে থাকলে ইস্ফাহানের আরও একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার মুখোমুখি হবো । এই স্থাপনাটি সাফাভি শাসনামলের সুন্দর সুন্দর প্রাসাদগুলোর একটি। প্রাসাদটির নাম হলো চেহেল সুতুন। ফার্সিতে চেহেল মানে চল্লিশ আর সুতুন মানে পিলার। সুন্দর এই প্রাসাদটি ছিল সাফাভি শাসকদের রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা। বহির্বিশ্বের কোনো দেশের রাজা-বাদশা কিংবা কোনো রাষ্ট্রদূত এলে এই প্রাসাদে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হতো। বহিরাঙ্গিক সৌন্দর্যময় অসাধারণ এই প্রাসাদ ভবন হিজরি এগারো শতকের অন্যতম একটি স্থাপত্য নিদর্শন।
মজার একটি ব্যাপার হলো চল্লিশ পিলার বা চেহেল সুতুন নামে পরিচিত এই প্রাসাদে কিন্তু চল্লিশটি পিলার নেই। তাহলে এরকম নামকরণ কেন? এই প্রাসাদের আসলে পিলার হলো বিশটি। তবে প্রাসাদের সামনের আঙ্গিনায় বড়ো একটি হাউজ আছে। পানিভর্তি ওই হাউজে বিশটি পিলারের প্রতিকৃতি আয়নার মতো জ্বলজ্বলে দেখা যায়। শোভাবর্ধনকারী ওই প্রতিকৃতির পিলারের সংখ্যা হিসেব করেই চল্লিশ বা চেহেল সুতুন নামকরণ করা হয়েছে।
ইস্ফাহানে আসলে দেখার আছে অনেক কিছু। বিশেষ করে এখানে আছে যয়ান্দেরুদ নামে একটি নদী। ওই নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে অসংখ্য সেতু। ঐতিহাসিক এইসব সেতু না দেখলে আপনাদের ইস্ফাহান সফরই বৃথা হয়ে যেতে পারে।
চহরবাগ আব্বাসি সড়কের একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই সেতু। তিন শ মিটার লম্বা এবং চৌদ্দ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি প্রথম শাহ আব্বাসের আদেশে নির্মাণ করা হয়। রাতের বেলা এই সেতুর ওপর গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালে আপনার মন আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে নি:সন্দেহে। সুযোগ পেলে অবশ্যই যাবেন আশা করি। পারস টুডে